পটুয়াখালীতে ২১টি হিন্দু পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা, থানায় অভিযোগ

পটুয়াখালীতে ২১টি হিন্দু পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা, থানায় অভিযোগ

পটুয়াখালী জেলার টাউন কালিকাপুর এলাকায় ২১টি হিন্দু পরিবারের নিজস্ব জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে একদল ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে। জমির মালিকরা জানিয়েছেন, তাদের ওপর ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে, সোমবার ভুক্তভোগী পরিবারগুলো থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে। পরিবারগুলো বলছে, দখলকারীরা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে জমিতে জোরপূর্বক অধিকার কায়েমের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার পক্ষ থেকে দুই পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জমির মালিকানা সংক্রান্ত এ বিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পটুয়াখালী, ২১ অক্টোবর ২০২৪: পটুয়াখালী শহরের টাউন কালিকাপুর এলাকায় ২১টি হিন্দু পরিবারের ক্রয়কৃত জমি দখলের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ভূমিদস্যুরা তাদের জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত এবং বিভিন্ন হুমকির মাধ্যমে তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। সোমবার সকালে এই পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় পটুয়াখালী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের একজন সদস্য ও বিএডিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আরতি রানী জানান, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এই ২১টি পরিবার টাউন কালিকাপুরের এসএ ৯৩১ নম্বর খতিয়ানের ২৬৭০ দাগে ১ একর ২১ শতাংশ এবং ২৬৬৯ দাগে ২৯ শতাংশ জমি ক্রয় করে। জমি কিনে তারা বালু দিয়ে ভরাট করে বসবাসের উপযোগী করে। পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের জমি হিসেবে এই জমি ভোগ করে আসছেন।

কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় বেল্লাল খান, মনিরুজ্জামান নাসির, এবং জামাল বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। সোমবার সকালে জমিতে গিয়ে কিছু পরিবারের সদস্যরা বসবাসের উপযোগী ঘর নির্মাণ করতে গেলে তারা বাধার সম্মুখীন হন। সন্ত্রাসীরা তাদের কাজে বাধা দেয় এবং এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এক ভুক্তভোগী কলেজশিক্ষক স্বপন খাসকেল বলেন, “গত ৯ অক্টোবরও ভূমিদস্যুরা জমিতে আমাদের প্রবেশে বাধা দেয় এবং তখনও তারা আমাদের হুমকি দেয়। আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় এবং এমনকি দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও ভয় দেখানো হয়।”

এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং জমি রক্ষা করতে সোমবার সকালে পটুয়াখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এ ছাড়া, তারা রোববার দুপুরে পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কাছেও লিখিতভাবে বিষয়টি জানান এবং তাদের জমি সুরক্ষার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে ভূমি দখলকারীদের মধ্যে বেল্লাল খান নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন এবং তিনি দাবি করেন, তারাও ক্রয়ের মাধ্যমে এই জমির মালিক। মনিরুজ্জামান নাসিরও একই দাবি করেন এবং বলেন, “আমি বিএনপির লোক। আমরা বর্তমান সরকারের আমলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছি।”

তবে বেল্লাল খান এবং মনিরুজ্জামান নাসির নিজেদের বিএনপির কর্মী বলে দাবি করলেও পটুয়াখালী পৌর বিএনপির সভাপতি মো. কামাল হোসেন জানান, এ দুজন বিএনপির কোনো পদ-পদবির অধিকারী নন এবং দলীয় পরিচয়ের আড়ালে নিজেদের কার্যক্রম চালানোর অভিযোগের ব্যাপারে তিনি দল থেকে কোনো সমর্থন দেননি।

পটুয়াখালী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতনুজ্জামান জানান, উভয় পক্ষকে থানায় আসতে বলা হয়েছে এবং উভয়কে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জমি সংক্রান্ত এই বিরোধ নিরসনে প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, হিন্দু পরিবারগুলোর সদস্যরা তাদের সম্পত্তির ওপর নিজেদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জমি সংক্রান্ত এই ঘটনা পরিবারগুলোর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে এবং তারা দ্রুত সমস্যাটির সমাধান চাচ্ছেন।

তারিখ: ১০.১১.২০২৪