আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, কিছু মানুষ বাংলাদেশে ভারতীয় স্ক্রিপ্ট বাস্তবায়নে চেষ্টা করছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, সরকার ও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে, যা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা। তিনি গঠনমূলক পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, কিছু ব্যক্তি দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং তারা ভারতীয় স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করছে। তাঁর মতে, সমালোচনা যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়ে ন্যায্য হয়, তা হলে তা গ্রহণযোগ্য, তবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকার এবং আন্দোলনকারীদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে, যা অশুভ উদ্দেশ্যপূণরূপে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াস।
জাতীয় প্রেসক্লাবে শনিবার সন্ধ্যায় ‘স্মৃতির মিনার: গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আসিফ নজরুল বলেন, ‘সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে, তবে যখন মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষের চরিত্র হনন করা হয়, তখন তা অসৎ উদ্দেশ্য বলে মনে হয়।’ তিনি আরও বলেন, “এভাবে সরকারকে দুর্বল করা, আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেছেন, কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছেন। “আমাদের প্রতিবেশী দেশের একটি স্ক্রিপ্ট এখানে রূপায়িত করার চেষ্টা চলছে, যাতে শেখ হাসিনা চলে গেলে বাংলাদেশে কোনো সরকার থাকতে না পারে অথবা দেশ উগ্রবাদীদের হাতে চলে যায়,” যোগ করেছেন তিনি। আসিফ নজরুল আরও বলেন, “কিছু মানুষ ভারতীয় স্ক্রিপ্ট বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে এবং এসব নিয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।”
আইন উপদেষ্টা গঠনমূলক সমালোচনার পক্ষেই বক্তব্য রেখেছেন, তবে মিথ্যা তথ্যের প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া-ঝাটি করি, নিজেদের চরিত্র হনন করি এবং মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিই, তাহলে আমরা ছাত্র-জনতার আত্মবলিদানের প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছি।”
এছাড়া, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। “কোনও ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, তবে সবার প্রতি অনুরোধ, সত্য জানার চেষ্টা করুন। মিথ্যা, অত্যাচার, নিপীড়ন, দোষারোপ—এগুলো পরাজিত শক্তির অস্ত্র,” মন্তব্য করেছেন তিনি।
আন্দোলনকারীদের ভূমিকা এবং তাদের অবদান তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, “আজকের আন্দোলনের জন্য তাঁরা আমাদের ভয়াবহ ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আজ যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের অবস্থান আরও খারাপ হবে। বাংলাদেশ কাশ্মীরের মতো পরিণতি বরণ করতে পারে।”
আসিফ নজরুল গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের আগে, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ তাদের ফেসবুকে কোন পত্রিকার রিপোর্ট সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করতেন? খুলে দেখেন, কোন পত্রিকা।” তিনি আরও যোগ করেন, “এখন যদি আমরা একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে ওঠে পড়ি, তখন কি সেই পত্রিকার ভূমিকা উড়িয়ে দেব?”
তিনি জানালেন, “আমার প্রতিবাদ থাকবে, আমি অবশ্যই প্রতিবাদ করব, কিন্তু কোনও পত্রিকাকে আমি শত্রু বানাতে পারি না। তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে শফিকুল আলমের বক্তব্যও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির ঢাকা ব্যুরো প্রধান হিসেবে ইনটারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় গণমাধ্যমকে সহায়তা করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ এবং সঞ্চালনা করেন বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি দিদারুল আলম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখক রাখাল রাহা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, কবি ফেরদৌস আরা রুমী প্রমুখ।
এ আলোচনার মাধ্যমে আসিফ নজরুল সরকার এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার ও ভারতীয় রাজনৈতিক অবস্থানের অশুভ প্রয়াস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
তারিখ: ৩০.১১.২০২৪