অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সাম্প্রতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেছেন, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, বন্যা পুনর্বাসন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুর্গাপূজায় নির্বিঘ্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক অনুদান সংগ্রহ, খাদ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড়, এবং টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপগুলো জনস্বার্থে গ্রহণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি রোধ ও কৃষিপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪: দেশের সাম্প্রতিক সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, সংখ্যালঘু সুরক্ষা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশ ছিল অরক্ষিত। সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। তবে অল্প কিছু সহিংসতার ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়, যা ধর্মীয় আবরণে উপস্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
তিনি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দুই মাসেই দেশে প্রায় ৩২ হাজার পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হয়। নির্বাহী আদেশে একদিন অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা ও কঠোর নিরাপত্তার ফলে হিন্দু সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে উৎসব উদ্যাপন করতে পেরেছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছর দেশে ছয়টি বন্যা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদানসহ স্থানীয়ভাবে ১০০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে। বন্যায় ফসলহানি ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল। তবে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ ও আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘বাজারে ডিম সরবরাহ বাড়াতে সাড়ে ৯ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে সরাসরি উৎপাদকদের বাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’
মূল্যস্ফীতি রোধে সরকার উচ্চ সুদের হার নির্ধারণ, শস্য আমদানিতে সীমা অপসারণ এবং সরবরাহ চেইন সংক্ষিপ্ত করার মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি। টিসিবির স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ৫৭ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জ্বালানি খাতে অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘জ্বালানি তেলের মূল্য সামান্য কমানো হয়েছে। শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম গণশুনানি ছাড়া না বাড়ানো এবং নেপাল থেকে পানিবিদ্যুৎ আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে বাজারে পণ্যমূল্য কমিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক চলছে।’’
সামগ্রিকভাবে দেশের সংকট মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তারিখ: ১৮.১১.২০২৪