তালিবান বাংলাদেশ: মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অভিযোগে হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হৃদয় রবি দাস নামের এক তরুণের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয়দের হাতে আটক হয়ে সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয় হৃদয়কে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কিশোরগঞ্জ, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪: কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হৃদয় রবি দাস (২১) নামের এক তরুণের রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য সামনে আসছে। শনিবার ভোরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদয় মারা যান। করিমগঞ্জের জয়কা বারুক বাজার এলাকার রিকশাচালক জুগেস রবি দাসের দ্বিতীয় ছেলে হৃদয় স্থানীয় এক সেলুনে কাজ করতেন।
পরিবারের দাবি, হৃদয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল একই এলাকার একজন এতিম মুসলিম কিশোরীর (১৬) সঙ্গে। এ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে কিশোরীর স্বজনরা হৃদয়কে শুক্রবার সন্ধ্যায় নোয়াবাদ বাজার থেকে ধরে নিয়ে যায়।
হৃদয়ের খুড়তুতো ভাই শাকিল রবি দাস জানান, তাদের দুজনকে বাজারের একটি ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, বাজার কমিটির সভাপতি মঞ্জিল মিয়াসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাদের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মারধর করা হয়। এক ঘণ্টা পরে সেনাক্যাম্পে পাঠানোর সময়ও তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন শাকিল।
শাকিল বলেন, ‘‘সেনাক্যাম্পে আমাদের আলাদা কক্ষে রাখা হয়। আমি হৃদয়ের কক্ষে কী ঘটেছে জানি না। গভীর রাতে হৃদয়কে হাসপাতালে নেওয়ার সময় দেখি তার অবস্থা খুব খারাপ।’’
হৃদয়ের বাবা জুগেস রবি দাস বলেন, ‘‘সেনাক্যাম্পে হৃদয়কে দেখতে দেওয়া হয়নি। রাত তিনটার দিকে শুনি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে সকালে জানতে পারি, সে মারা গেছে।’’
সেনাক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল করিম জানান, হৃদয়কে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয়ের মুঠোফোন থেকে ধর্মান্তরিত ও পাচারের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হৃদয় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে মারা যায়।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুল ইসলাম জানান, হৃদয়ের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল দাবি করেন, হৃদয়ের মুঠোফোন চেক করে সেনাক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল, তবে তাকে নির্যাতন করা হয়নি।
শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে হৃদয়ের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাতে স্থানীয় শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
তারিখ: ১৮.১১.২০২৪