হিন্দু, হাসিনা, হতাশা: যে সব কারণে দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্ক কিছুতেই সহজ হচ্ছে না

হিন্দু, হাসিনা, হতাশা: যে সব কারণে দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্ক কিছুতেই সহজ হচ্ছে না

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবস্থা বর্তমানে এক অস্বস্তিকর শীতলতা অনুভব করছে। গত একশো দিনে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে সরাসরি আলোচনা কার্যত স্থগিত। সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভারত একাধিকবার বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নালিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার ভারত অবস্থান এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। (সূত্রঃ বিবিসি)

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪: মাত্র কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘সোনালি অধ্যায়’ বলে যে সম্পর্ককে আখ্যা দেওয়া হচ্ছিল, বর্তমানে সেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চরম শীতলতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে তেমন কোনও আলোচনার আয়োজন হয়নি।

নেতৃত্ব পর্যায়ে যোগাযোগের অভাব

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর একশো দিন পার হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার কোনও সরাসরি বৈঠক হয়নি। সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠকের অনুরোধ জানানো হলেও ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে।

এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে মাত্র একবার টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে, যেখানে ভারত প্রধানত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে অভিযোগ তোলে।

দ্বিপাক্ষিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা

বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম কার্যত বন্ধ রয়েছে। জরুরি চিকিৎসা ভিসা ছাড়া সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ অন্য ট্রেন চলাচলও বন্ধ। ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থার নির্মাণ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ সরবরাহেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ

ভারত বারবার বাংলাদেশ সরকারকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই বিষয়ে সরাসরি বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

শেখ হাসিনার ভারত অবস্থান

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ভারত বলছে, তিনি ‘সাময়িক আশ্রয়ে’ আছেন। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ফিরিয়ে আনার কথা বললেও তাতে কোনও সাড়া মেলেনি।

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ

ভারতের সাবেক কূটনীতিক হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, “এখনকার বাংলাদেশ সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। তাদের ম্যান্ডেট সীমিত। ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও তাই সীমাবদ্ধ।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কূটনৈতিক মহলে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনার উপস্থিতি এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যু দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।

শেখ হাসিনার ভারত অবস্থান এবং সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের স্পষ্ট অবস্থান ভবিষ্যতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে শীতল সম্পর্কের অধ্যায় চলছে, তা দ্রুত মীমাংসার পথে না এগুলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন এবং জনগণের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তারিখ: ১৭.১১.২০২৪