সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতার পর থেকে রাঙামাটির ঋতুপর্ণা চাকমা ও রুপনা চাকমার গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। মঘাছড়ি গ্রামের ঋতুপর্ণা ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে গোল করে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন। একইভাবে নানিয়ারচরের রুপনা চাকমা দেশের সেরা গোলরক্ষক হয়ে জনসাধারণের ভালোবাসায় সিক্ত হন। তাঁদের এই সাফল্যে পুরো রাঙামাটিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে, পরিবারের সদস্যরা এই গৌরবগাঁথার জন্য সবার দোয়া ও শুভকামনা কামনা করছেন।
রাঙামাটি, ৩১ অক্টোবর: নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর থেকেই গতকাল বুধবার রাত থেকে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি গ্রামে বইছে খুশির জোয়ার। এই ঐতিহাসিক জয়ের নায়িকা মঘাছড়ির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা, যার অসাধারণ গোলেই বাংলাদেশ শিরোপা জয় করে।
ফাইনালের ৮১তম মিনিটে ডিফেন্ডার শামসুন্নাহার সিনিয়রের থ্রো-ইন থেকে বল পেয়ে বাঁ দিকের ডি-বক্সের বাইরে থেকে হাওয়ায় ভাসানো এক দুর্দান্ত শট নেন ঋতুপর্ণা। নেপালের গোলরক্ষক আনজিলা তুম্বাপো ঝাঁপিয়ে পড়ে বল আটকানোর চেষ্টা করলেও ক্রসবারে লেগে তা গোললাইন অতিক্রম করে। এই অসাধারণ গোলের জন্য ঋতুপর্ণা সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নেন, যা তার পরিবার ও গ্রামের জন্য গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মঘাছড়ির প্রতিটি মানুষ ঋতুপর্ণার এই কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা করছেন। চা-দোকানের আড্ডা, জুমখেতের শ্রমিকদের কথাবার্তা, বাড়ির আঙিনার গল্প—সবখানেই ঋতুপর্ণার নাম। তার মা বসুবতি চাকমা মেয়ের এই সাফল্যে অভিভূত, শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছেন তিনি। আজ সকাল থেকেই জনপ্রতিনিধি ও আশপাশের লোকজন এসে তাঁদের বাড়িতে ঋতুপর্ণাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। বসুবতি চাকমা জানান, সকাল ৯টার দিকে ঋতুপর্ণা তাদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “এই অর্জনে আমরা খুবই খুশি। ঋতু সবার কাছ থেকে দোয়া চেয়েছে এবং আমি প্রতি খেলার আগে তার জন্য প্রার্থনা করি।”
ঋতুপর্ণার পরিবারের আনন্দে অংশ নিতে কাউখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অর্জুন মনি চাকমা তাদের বাড়িতে যান এবং বলেন, “ঋতুপর্ণা সেরা খেলোয়াড় হওয়ায় আমরা গর্বিত। এই কৃতিত্বে আমরা সবাই খুশি।”
মঘাছড়ির পাশাপাশি নানিয়ারচরের ভুইয়ো আদাম গ্রামের মানুষও আনন্দে মেতেছে। কারণ সাফজয়ী দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা এই গ্রামের মেয়ে। জাতীয় দলের এই কৃতী গোলরক্ষক দেশের হয়ে বড় অবদান রেখে সাফের সেরা গোলরক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এর আগেও, ২০২২ সালের সাফে রুপনা সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছিলেন।
রুপনার মা কালাসোনা চাকমা জানান, লোকজনের মুখে শুনেছেন যে তাঁর মেয়ে এবারও সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে এবারও সেরা গোলরক্ষক হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে খবরটা তার কাছ থেকে পাইনি; লোকজনই আমাকে জানিয়েছে। গতকাল থেকে বিভিন্ন মানুষ ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, খুব খুশি লাগছে। আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।”
ঋতুপর্ণা ও রুপনার এই সাফল্য শুধু রাঙামাটির গর্বই নয়, পুরো দেশের জন্য গৌরবের।
তারিখ ৩১.১০.২০২৪