ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের মাঝিপাড়া এলাকায় নিজ বাসার সামনে সাংবাদিক স্বপন কুমার ভদ্র (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার দাবি করেছে, ফেসবুকে লেখালেখির কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ এক তরুণকে আটক করেছে। হত্যাকাণ্ডটি এলাকায় ব্যাপক শোক ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ ও স্থানীয়দের দাবি, আটককৃত সাগর মিয়া একজন বখাটে ও মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত। ঘটনার তদন্ত চলছে।
ময়মনসিংহ, ১২ অক্টোবর: ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের মাঝিপাড়া এলাকায় নিজ বাসার সামনে সাংবাদিক স্বপন কুমার ভদ্র (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত স্বপন কুমার ভদ্র তারাকান্দা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি পূর্বে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বজন পত্রিকায় তারাকান্দা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। যদিও বর্তমানে তিনি কোনো গণমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন না, তবুও ফেসবুকে সামাজিক ইস্যুতে নিয়মিত লেখালেখি করতেন।
স্বপন কুমার ভদ্রের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, তাঁর লেখালেখির কারণেই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরিবার জানিয়েছে, এক বছর আগেও তাঁর ওপর হামলা হয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ সাগর মিয়া (১৮) নামের এক তরুণকে আটক করেছে। সাগর মাঝিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়ার ছেলে এবং এলাকায় বখাটে ও নেশাগ্রস্ত হিসেবে পরিচিত।
নিহত স্বপন কুমার ভদ্রের ভাতিজা জুয়েল ভদ্র জানান, “আজ বেলা ১১টার দিকে উনি নিজ বাসার সামনে বসে ছিলেন। সেই সময়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এমনকি তাঁর বাঁ হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। উনার স্ত্রীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে এবং তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
আজ দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বপন কুমার ভদ্রের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আবুল কাশেম। তিনি বলেন, “স্বপন ভদ্রের ঘাড়ে ছয়টি কোপের চিহ্ন রয়েছে এবং বাঁ হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপানোর চিহ্ন পাওয়া গেছে।”
নিহত স্বপন ভদ্রের ভাগনে মানিক সরকার অভিযোগ করে বলেন, “মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার কারণেই আমার মামাকে হত্যা করা হয়েছে। লেখালেখির জন্য তাঁর ওপর রাগ ছিল, আর সে কারণেই তাঁর হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।”
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান জানান, আটক সাগর এলাকায় একজন বখাটে হিসেবে পরিচিত এবং মাদকাসক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগও রয়েছে। সাগর আগেও স্বপন ভদ্রকে আঘাত করেছিল এবং তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে স্বপন ভদ্র প্রতিবাদ করেছিলেন। ওসি আরও জানান, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে সাগরই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চলছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানানো হবে।”
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসী এমন একটি জঘন্য ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। স্বপন কুমার ভদ্রের পরিবার শোকাহত অবস্থায় বিচার চেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা প্রত্যাশা করছেন।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার আজিজুল ইসলাম আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং আটককৃত সাগর একজন অপরাধী। আমরা পুরো ঘটনার তদন্ত করছি এবং শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।”
এদিকে, স্বপন কুমার ভদ্রের লেখালেখি ও প্রতিবাদমূলক কার্যক্রমের জন্য তাঁকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তারিখ ১৩.১০.২০২৪