কিশোরগঞ্জে দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর: পূজার আয়োজন কমিটির হতাশা

কিশোরগঞ্জে দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর: পূজার আয়োজন কমিটির হতাশা

কিশোরগঞ্জ, ৩ অক্টোবর: কিশোরগঞ্জের শহরে প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য তৈরি করা সাতটি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে, যখন বত্রিশ এলাকার মণিপুরঘাট রোডের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ায় পূজা উদযাপনের জন্য প্রতিমাগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছিল। গোপীনাথ সংঘের সদস্যদের উদ্যোগে আয়োজিত এই পূজায় প্রথমবারের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা একত্রিত হয়েছিলেন। তাদের দাবি, দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত দুর্গাপূজার সাতটি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের মণিপুরঘাট রোড হিন্দুপাড়ার গোপীনাথ সংঘ আয়োজিত পূজায় এই ঘটনা ঘটে। সংঘের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল এবং এখন শুধু রং করার কাজ বাকি ছিল। মহালয়া পার হয়ে দুর্গাপূজার মাত্র সাত দিন বাকি থাকতেই এমন ঘটনার শিকার হতে হলো।

প্রতিমা ভাঙচুরের সময়

গোপীনাথ সংঘের সদস্য অপু কান্তি রায় জানান, রাতে তারা পাঁচজন মন্দির পাহারায় ছিলেন। রাত চারটা পর্যন্ত পাহারায় থাকার পর বৃষ্টি শুরু হলে তারা ঘুমাতে যান। এরপর ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান যে দুর্গা, লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিকসহ মোট সাতটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। অপু কান্তি বলেন, “পূজা করতে দূরে যেতে হতো, তাই এবারই প্রথম আমরা এলাকাবাসী মিলে নিজেদের এলাকায় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু এমন ঘটনায় আমরা মুষড়ে পড়েছি।”

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও উদ্বেগ

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুর্গাপূজার উৎসবের জন্য প্রতিমা তৈরির কাজ একপ্রকার শেষ হয়ে গিয়েছিল। এবারই প্রথমবারের মতো তাঁরা তাঁদের এলাকায় একত্রিত হয়ে পূজার আয়োজন করেছিলেন, যা স্থানীয় সনাতনীদের জন্য একটি বড় মাপের উদযাপন হতে চলেছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তদের এই আক্রমণের ফলে সবাই ভীষণভাবে হতাশ এবং নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি লিটন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার সাহা বলেন, “এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলাম, কিন্তু এভাবে প্রতিমাগুলো ভেঙে দেওয়ায় আমরা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। প্রশাসনের কাছে আমাদের একমাত্র দাবি, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”

পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। দুষ্কৃতকারী যে–ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।” তিনি আরও আশ্বাস দেন যে, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার পেছনে যাদের হাত রয়েছে, তাদের শনাক্ত করতে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে এবং তদন্তের অগ্রগতি দ্রুত জানানো হবে।

পূজা উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

গোপীনাথ সংঘের সদস্য ও স্থানীয় সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা জানান, এবারই প্রথম তাঁরা নিজেদের এলাকায় পূজার আয়োজন করেছেন। সাধারণত, এলাকার হিন্দু পরিবারগুলোকে দূরের মন্দিরে গিয়ে পূজা করতে হতো। কিন্তু এবার তাঁরা নিজেদের জায়গাতেই দুর্গাপূজা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ছোট থেকে বড় সবাই মিলে একত্রিত হয়ে প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করেছেন। কিন্তু মহালয়ার পরে যখন তাঁরা পূজার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন, তখনই দুর্বৃত্তরা তাদের স্বপ্ন নষ্ট করে দিল।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনার পর স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের আক্রমণ শুধু তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে না, বরং এটি তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করে। এলাকাবাসীর দাবি, মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করা হোক এবং পূজা উদ্‌যাপন যেন কোনো বাধা ছাড়াই সম্পন্ন হয়, সেজন্য প্রশাসনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

পূজার আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবি, “আমরা প্রশাসনের কাছে জোরালো আবেদন জানাই, যারা এই কাজটি করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। এটি শুধু প্রতিমা ভাঙচুর নয়, আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত। যদি এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে, যা আমাদের ধর্মীয় সহাবস্থানের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

কিশোরগঞ্জের এই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা শুধু স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সমগ্র দেশের ধর্মীয় সহাবস্থানের জন্য একটি হুমকিস্বরূপ। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, প্রশাসন দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে এবং পূজার মতো উৎসবগুলো যাতে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

তারিখ ০৪.১০.২০২৪