ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌর চন্দ্র ঘোষ তাঁর দীর্ঘ ৩০ বছরের শিক্ষকতা শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিদায় নিলেন। নিজ হাতে গড়ে তোলা বিদ্যালয়টি তাঁর অবিচল শিক্ষা ও সেবার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ বিদায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই আবেগাপ্লুত হন। তাঁর শিক্ষার আলোতে গড়ে উঠেছেন অনেক বিচারক, কর্মকর্তা ও শিক্ষিত মানুষ। তাঁর সততা, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা স্মরণীয় হয়ে থাকবে সহকর্মীদের মাঝে।
ঝিনাইদহ, ২৪ অক্টোবর: নিজ হাতে বিদ্যালয় গড়ে তোলা শিক্ষক গৌর চন্দ্র ঘোষ আজ বৃহস্পতিবার তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি টানলেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের বিদায়ের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ যেন এক আবেগময় দৃশ্য। জীবনের ৩০ বছর ৯ মাস ২২ দিন তিনি এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে কেটেছেন। অনেকেই গৌর চন্দ্র ঘোষকে তাঁদের শিক্ষাজীবনের অনুপ্রেরণা ও সাফল্যের প্রেরণা হিসেবে মনে করেন।
গৌর চন্দ্র ঘোষ প্রথমে নিজের জমি দান করে বেজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার কাজে অংশ নেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১৯৯৩ সালের শেষ দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাঁশ কেটে তৈরি করেন স্কুলঘর। ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাংলার শিক্ষক হিসেবে পাঠদান শুরু করেন তিনি। প্রথম সাত বছর বিনা পারিশ্রমিকে বিদ্যালয়ে কাজ করেন। পরে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো বেতন হিসেবে ২ হাজার ১০০ টাকা পান। সেই থেকে তার বেতন ধীরে ধীরে বাড়লেও তাঁর উৎসর্গ কখনো কমেনি।
গৌর চন্দ্র ঘোষের শিক্ষা ও সততার উদাহরণ অগণিত শিক্ষার্থীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর বহু ছাত্র এখন বিচারক, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, এমনকি নৌবাহিনীর উচ্চপদে কর্মরত আছেন। তাঁর সহকর্মীরা বলেন, গৌর চন্দ্র ছিলেন একজন আদর্শবান ও সত্যানিষ্ঠ শিক্ষক। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাবেও তাঁর সততা অনন্য। কখনো কোনো অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেনি।
বিদায়ী মুহূর্তে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ মাহমুদ বলেন, “একজন শিক্ষানুরাগী, নম্র ও ভদ্র সহকর্মীকে আজ আমরা বিদায় জানালাম। তাঁর সততা এবং নিরলস প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠানটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই দীর্ঘ পথচলায় তাঁকে পাশে পেয়ে আমরা ধন্য।” তিনি জানান, তাঁদের স্কুলের তিনটি ভবন, সাতটি শ্রেণিকক্ষ এবং দুটি অফিস ও কমন রুম তৈরিতে গৌর চন্দ্র ঘোষের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।
বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রাশেদুজ্জামান ও অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিদায়ী শিক্ষককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং সবাই তাঁকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। এছাড়াও একসময়ের সহকর্মী জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. আক্তার জাহান এবং চাঁচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু আলম এই বিদায়ের খবর শুনে ছুটে আসেন। আক্তার জাহান বলেন, “গৌর চন্দ্র খুবই সৎ ও মেধাবী শিক্ষক। তাঁর সততার কারণে বিদ্যালয়ের একটি টাকাও অপচয় হয়নি।”
গৌর চন্দ্র ঘোষের সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে তার সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের মতো এলাকাবাসীরও গর্ব। শিক্ষকতার জীবনের শেষ দিনে এই বিদায় অনুষ্ঠানে সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁকে একজন অনুপ্রেরণাদায়ী শিক্ষক হিসেবে মনে রাখবে সবাই।
এ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আগামী ১৪ নভেম্বর বেজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বড় করে এক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তারিখ ২৬.১০.২০২৪