বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুবকদের সামাজিক মাধ্যম হ্যাকিং ও মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রতারণার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরসিবিএম (হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ)। উগ্র গোষ্ঠীগুলি এবং বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)-এর অপপ্রয়োগের ফলে নিরপরাধ সংখ্যালঘু যুবকদের জীবন ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ছে।
ঢাকা, ২৯ অক্টোবর: বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিক অত্যাচারের এক ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (এইচআরসিবিএম)। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবকদের ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এমনকি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই যুবকদের কোনো পূর্ব তদন্ত ছাড়াই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) আওতায় গ্রেফতার করা হচ্ছে।
একটি মারাত্মক ঘটনার শিকার হয়েছেন ১৭ বছর বয়সী উৎসব মণ্ডল। পুলিশ এবং সেনাবাহিনী উপস্থিত থাকলেও তাঁকে মব লিঞ্চিং থেকে রক্ষা করা যায়নি। সরকার থেকে জানানো হয়েছে যে উৎসব বেঁচে আছেন, তবে তাঁর বর্তমান অবস্থান এবং তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট তথ্য নেই। এইচআরসিবিএম এখনো তাঁর অবস্থা জানার চেষ্টা করছে।
আরেকটি গুরুতর ঘটনার শিকার হৃদয় পাল। ফরিদপুরের এই যুবকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাতে ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ, তাঁকে সাতদিন আটক রাখা হয় এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায় হৃদয়কে চোখ বেঁধে, হাত বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের পর একটি সামরিক গাড়িতে তোলা হয়। তাঁর বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎও অজানা।
এইচআরসিবিএম-এর একজন মুখপাত্র জানান, “এই ঘটনাগুলি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু যুবকদের সুরক্ষা ব্যর্থতার চিত্র স্পষ্ট করে। যারা এই সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ না করে, আইন প্রয়োগকারীরা ভিত্তিহীন অভিযোগে আক্রান্তদের গ্রেফতার করছে।”
এই ধরনের নির্যাতনের পাশাপাশি, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে যা ইতিমধ্যেই টানাপোড়েনের মুখে থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবনকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার যখন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে প্রাধান্য দেয়, তখনই উগ্র গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা পরিলক্ষিত হয়।
এইচআরসিবিএম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংগঠন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের এই নির্যাতন রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি আশা প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশের সরকার ডিজিটাল ফরেনসিক প্রোটোকল বাস্তবায়ন করবে, উগ্র গোষ্ঠীগুলিকে দায়ী করবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
তারিখ ২৯.১০.২০২৪