এই অংশে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে সর্বশেষ ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ খবর, নির্যাতন-নিপীড়নের আপডেট, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়সহ সব ধরনের প্রাসঙ্গিক সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ করা হয়। এটি কমিউনিটির বাস্তব চিত্র তুলে ধরার একটি নির্ভরযোগ্য উৎস।
এটি এই বিভাগটির বহু পৃষ্ঠার মুদ্রণযোগ্য দর্শন। মুদ্রণ করতে এখানে ক্লিক করুন.
সংবাদ ২০২২
- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার
- মহানগর পর্যায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার
- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয় না
- সংখ্যালঘু নির্যাতন, গুম-ক্রসফায়ারে আর ভয়ের চাদরে ২০২১
- ১৮ বছরেও পরিবারের ১১ জনের হত্যার বিচার পাননি বিমল
- সর্বোচ্চ আদালতে তৃতীয় নারী বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ
- বাংলাদেশে কেউ ‘সংখ্যালঘু নয়’, কোবিন্দকে জানালেন হাসিনা
- ৩৩ থেকে ৮ শতাংশ, বাংলাদেশে ক্রমশ কমছে হিন্দুদের সংখ্যা
- কুমিল্লার দুর্গাপূজা এবং হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা পরিক্রমা
- বাংলাদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম মতাদর্শিকভাবে সাম্প্রদায়িক?
- ৯ বছরে হিন্দুদের উপর ‘৩৬৭৯ হামলা’
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার

বাংলাদেশ সরকার সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পে ১ মার্চ, ২০১৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখের মধ্যে ২২৮ কোটি ৬৯ লাখ খরচ করার কথা। খোঁজ করে দেখুন তো, সত্যি আপনার এলাকার কোন মন্দির বা প্রতিষ্ঠান কোন সাহায্য পেয়েছে কিনা, পেয়ে থাকলে কত পেয়েছে?
প্রকল্প
সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ঃ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাঃ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
প্রকল্প পরিচালকঃ রনজিৎ কুমার, যুগ্ম সচিব
প্রকল্প শুরুর তারিখঃ ১ মার্চ, ২০১৯
প্রকল্প শেষ করার তারিখঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১
প্রাক্কলিত ব্যয়ঃ ২২৮,৬৯,০০,০০০ টাকা
অর্থায়নের ধরণঃ জিওবি
প্রকল্প ব্যবস্থাপনাঃ
১. প্রকল্পটি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে।
২. প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংস্থা পর্যায়ে একটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হবে।
৩. তাছাড়া মন্দির, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।
৪. প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ই্উনিটে প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল প্রেষণ/সরাসরি / আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হবে।
৫. প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউনিটে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীগণ দরপত্র আহ্বান করবেন।
৬. ঠিকাদারদের বিল পরামর্শকের সুপারিশক্রমে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে সরাসরি ঠিকাদারগণের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হবে।
৭. স্থানীয় কোন সমস্যা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা প্রকৌশলীর সহায়তা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ সরকার
তারিখ ৩১.০১.২০২২
মহানগর পর্যায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার

মহানগর পর্যায়ের মন্দিরসমূহের নাম, যারা বাংলাদেশ সরকারের ধর্মীয় প্রকল্পে ১ মার্চ, ২০১৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পে টাকা পেয়েছেন। খোঁজ করে দেখুন তো, আপনার এলাকার কোন মন্দির বা প্রতিষ্ঠান কোন সাহায্য পেয়েছে কিনা, পেয়ে থাকলে কত পেয়েছে?
প্রকল্প
সমগ্র দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ঃ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাঃ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট
প্রকল্প পরিচালকঃ রনজিৎ কুমার, যুগ্ম সচিব
প্রকল্প শুরুর তারিখঃ ১ মার্চ, ২০১৯
প্রকল্প শেষ করার তারিখঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১
প্রাক্কলিত ব্যয়ঃ ২২৮,৬৯,০০,০০০ টাকা
অর্থায়নের ধরণঃ জিওবি
প্রকল্প ব্যবস্থাপনাঃ
১. প্রকল্পটি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে।
২. প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংস্থা পর্যায়ে একটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হবে।
৩. তাছাড়া মন্দির, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।
৪. প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ই্উনিটে প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল প্রেষণ/সরাসরি / আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হবে।
৫. প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউনিটে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীগণ দরপত্র আহ্বান করবেন।
৬. ঠিকাদারদের বিল পরামর্শকের সুপারিশক্রমে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে সরাসরি ঠিকাদারগণের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হবে।
৭. স্থানীয় কোন সমস্যা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা প্রকৌশলীর সহায়তা গ্রহণ করা হবে।
মহানগর পর্যায়ের মন্দিরসমূহ
| ক্রমিক | জেলা/মহানগর | উপজেলা/পৌরসভা | স্কিমের নাম | ইউনিয়ন/ ওয়ার্ড নং |
|---|---|---|---|---|
| ১ | ঢাকা | মহানগর উত্তর | বিটিসিএল সার্বজনীন পূজা মন্দির | কড়াইল, বনানী |
| ২ | ঢাকা | মহানগর উত্তর | শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর আখড়া মন্দির | শেরেবাংলা রোড, রায়ের বাজার,মোহাম্মদপুর |
| ৩ | ঢাকা | মহানগর উত্তর | শ্রীশ্রী কালী মন্দির | রড় বেরাইদ, হাউজাল খুষিপাড়া,বেরাইদ, বাড্ডা |
| ৪ | ঢাকা | মহানগর উত্তর | শ্রীশ্রী রক্ষাকালী মন্দির | মাওসাইদ, উজামপুর, উত্তরখান |
| ৫ | ঢাকা | মহানগর উত্তর | মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির | সেকশন-২, ওয়ার্ড-৭, মিরপুর |
| ৬ | ঢাকা | মহানগর উত্তর | আগারগীও তালতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির | তালতলা সরকারী কলোনী |
| ৭ | ঢাকা | মহানগর উত্তর | শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির | মিরপুর ডিওএইচএস |
| ৮ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | শ্রীশ্রী লক্ষ্মীনারাণ জিউর মন্দির | শেখসাহেব বাজার, লালবাগ |
| ৯ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | পোস্তগলা জাতীয় মহাশ্মশান | শ্যামপুর থানা |
| ১০ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ মিশন | আর কে মিশন রোড |
| ১১ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্বজনীন পূজা মন্দির | শাহজাহানপুর |
| ১২ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | জগন্নাথ হল উপাসনালয় | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
| ১৩ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | জয়কালী মন্দির | টিকাটুলী |
| ১৪ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | গৌড়ীয় মঠ | নারিন্দা |
| ১৫ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির | গণকটুলী সিটি কলোনি, হাজারীবাগ |
| ১৬ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | শ্রীশ্রী যমুনা মাঈ আশ্রম | ৮৭ ডলক নগর লেন, গেন্ডারিয়া |
| ১৭ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী আখড়া মন্দির | ৫৬ পশ্চিম জুরাইন, আইভি গেইট,শ্যামপুর |
| ১৮ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | অরুণিমা দেবকল্যাণ দেবালয় | এজিবি কলোনি, মতিঝিল |
| ১৯ | ঢাকা | মহানগর দক্ষিন | আনন্দময়ী সংঘ | ১৪ সিদ্ধেন্বরী লেন, ঢাকা -১২১৭ |
| ২০ | গাজীপুর | মহানগর | শ্রীশ্রী কৃপাময়ী কালী মন্দির | জয়দেবপুর বাজার |
| ২১ | গাজীপুর | মহানগর | শ্রীশ্রী ইন্দ্রেশ্বর শিব মন্দির মহাম্মশান | মহানগর এলাকা |
| ২২ | গাজীপুর | মহানগর | মাধববাড়ি শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মন্দির | মহানগর এলাকা |
| ২৩ | নারায়ণগঞ্জ | মহানগর | শ্রীশ্রী গোপাল জিউড় আখড়া | ২২ জমিদারী কাচারী গলি, নিতাইগঞ্জ |
| ২৪ | নারায়ণগঞ্জ | মহানগর | শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউড় আখড়া | ৭৮ এলএনএ রোড, দেওভোগ |
| ২৫ | নারায়ণগঞ্জ | মহানগর | রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম | নারায়ণগঞ্জ মহানগর |
| ২৬ | ময়মনসিংহ | মহানগর | শ্রীশ্রী শিববাড়ি মন্দির | গাঙ্গিনার পাড় |
| ২৭ | ময়মনসিংহ | মহানগর | শ্রীশ্রী দুর্গাবাড়ি মন্দির | দুর্গাবাড়ি রোড |
| ২৮ | ময়মনসিংহ | মহানগর | শ্রীশ্রী লোকনাথ বাবার মন্দির | বড় কালীবাড়ি রোড ১৯২ |
| ২৯ | ময়মনসিংহ | মহানগর | রাজা বিজয়সিংহ দুরধরিয়া শিব মন্দির | কালীবাড়ি রোড |
| ৩০ | ময়মনসিংহ | মহানগর | রামকৃষ্ণ আশ্রম | ময়মনসিংহ |
| ৩১ | ময়মনসিংহ | মহানগর | আমলাপাড়া সার্বজনীন পুজা মন্দির | আমলাপাড়া |
| ৩২ | ময়মনসিংহ | মহানগর | শ্রীশ্রী সার্বজনীন দুর্গামাতা মন্দির | হরিজন পল্লী |
| ৩৩ | ময়মনসিংহ | মহানগর | সৎসঙ্গ আশ্রম | দুর্গাবাড়ি রোড |
| ৩৪ | বরিশাল | মহানগর | অমৃত অঙ্গন | নতুন বাজার |
| ৩৫ | বরিশাল | মহানগর | পাশানময়ী কালীমাতার মন্দির | কালীবাড়ি |
| ৩৬ | বরিশাল | মহানগর | সার্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির | টিয়াখালী , সাগরদি |
| ৩৭ | বরিশাল | মহানগর | রাধাগোবিন্দ জিউর মন্দির | বাজার রোড, সদর |
| ৩৮ | কুমিল্লা | মহানগর | শ্রীশ্রী কাত্যায়নী কালীবাড়ি | কান্দিরপাড়, ১১ নং ওয়ার্ড |
| ৩৯ | কুমিল্লা | মহানগর | শ্রীশ্রী রাজ রাজেন্বী কালীবাড়ি | মনোহরপুর, ১০ নং ওয়ার্ড |
| ৪০ | কুমিল্লা | মহানগর | শ্রীশ্রী কালী মন্দির | ঘোষপাড়া, ২২ নং ওয়ার্ড |
| ৪১ | খুলনা | মহানগর | ছোট বয়রা কালীবাড়ি সার্বজনীন পূজা মন্দির(পুজাখোল) | ছোট বয়রা, সোনাডাঙ্গা |
| ৪২ | খুলনা | মহানগর | গল্লামারি সার্বজনীন বিভাগীয় হরিমন্দির | গল্লামারি |
| ৪৩ | খুলনা | মহানগর | শ্রীশ্রী কালীবাড়ি কয়লাঘাট মন্দির | সাউথ সেন্ট্রাল রোড |
| ৪৪ | খুলনা | মহানগর | তালতলা আয মন্দির | তালতলা মসজিদ রোড |
| ৪৫ | রাজশাহী | মহানগর | রাজারহাটা কালী মন্দির | রাজারহাটা, ১১ নং ওয়ার্ড |
| ৪৬ | রাজশাহী | মহানগর | পীচু মন্ডল আখড়া মন্দির | ষোড়াখারা |
| 8৭ | রাজশাহী | মহানগর | পঞ্চবটি মহাম্মশান ও মন্দির কমপ্লেক্স | রামচন্দ্রপুর |
| ৪৮ | রাজশাহী | মহানগর | রামকৃষ্ণ আশ্রম | সুলতানাবাদ |
| ৪৯ | সিলেট | মহানগর | শ্রীশ্রী গোবিন্দ জিউর আখড়া | তালতলা |
| ৫০ | সিলেট | মহানগর | বলরাম জিউর আখড়া | মিরা বাজার |
| ৫১ | সিলেট | মহানগর | শ্রীশ্রী তিনমন্দির শিববাড়ি | লামাবাজার |
| ৫২ | সিলেট | মহানগর | শ্রীশ্রী শ্যাম সুন্দর জিউ দেবতার আখড়া | বিলপার, লামাবাজার |
| ৫৩ | সিলেট | মহানগর | সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মন্দির | সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় |
| ৫৪ | রংপুর | মহানগর | আনন্দময়ী সেবাশ্রম | কলেজ রোড, সদর |
| ৫৫ | রংপুর | মহানগর | শ্রী বারোয়ারী কালী মন্দির | পশ্চিম জুম্মাপাড়া |
| ৫৬ | রংপুর | মহানগর | বোতলাপাড়া হরি মন্দির | রোতলা শালবন |
| ৫৭ | রংপুর | মহানগর | রামকৃষ্ণ মিশন | মাহিগঞ্জ |
সূত্র: বাংলাদেশ সরকার
তারিখ ৩১.০১.২০২২
সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয় না

বাংলাদেশে যেকোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না৷ ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও৷ অভিযোগ, নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না৷ সুনামগঞ্জে হিন্দু পল্লীতে হামলা হয় মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে৷ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ হামলায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে৷ সবশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন ‘মূল আসামি’ শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বার৷
সুনামগঞ্জের শাল্লা
স্থানীয় গণমাধ্যমে শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে যুবলীগ সভাপতি বলা হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, তিনি যুবলীগের কেউ নন৷
এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে এখন তৎপর হলেও ঘটনার ১২ ঘণ্টা আগে খবর পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ এই ঘটনার একদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে ঝুমন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ অন্যদিকে আটক স্বাধীন মেম্বার হামলার পর শাল্লা থানার ওসির সাথেই ছিলেন বলে গ্রেপ্তারের আগে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷
রামু, কক্সবাজার
২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনা ঘটে৷ প্রায় নয় বছর পার হলেও কোন বিচার এখনও হয়নি৷ এই ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা হয়েছিল৷ একটি মামলার চার্জশিট হলেও বিচার শুরু হয়নি৷ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তারা সবাই জামিনে আছেন৷ আর যে উত্তম বড়ুয়ার নামে ফেসবুক পোস্টের অজুহাতে রামু, উখিয়া এবং টেকনাফে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল তিনি জামিন পেলেও এখন নিখোঁজ রয়েছেন৷ যদিও তদন্তে তার ফেসবুক পোস্টের কোনো প্রমাণ মেলেনি৷
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর
২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু বসতিতে হামলার তদন্ত প্রায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি৷ ওই সময় যাদের আটক করা হয়েছিল তারাও জামিনে মুক্ত৷ অন্যদিকে লেখাপড়া না জানা যে রসরাজের ফেসবুক পোস্টের ধর্মীয় অবমাননার কথা তুলে হামলা হয়েছিল তাকেই উল্টো দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে৷ এখন জামিন পেলেও আতঙ্কে তার দিন কাটছে৷
এর শেষ কোথায়?
গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর এই সাত মাসে ৬০টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে৷ মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ২৩টি ঘটনা ঘটেছে৷ ওই সময়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ১৭ জন সংখ্যালঘু৷ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ১১ জনকে৷ ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩০ জন৷ অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৩ জন৷
২৭টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে৷ বসতভিটা, জমিজমা, শ্মশান থেকে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি৷ সাতজনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে চারজনকে৷ বসত-ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৮৮টি৷ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ২৪৭ জন৷
সংবাদ সূত্র: ডয়চে ভেলে
তারিখ 19.11.2021
সংখ্যালঘু নির্যাতন, গুম-ক্রসফায়ারে আর ভয়ের চাদরে ২০২১

ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল ২০২১ সাল। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন (১৩ অক্টোবর) কুমিল্লার নানুয়ার দীঘি পূজামন্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ও তার পরপর চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারধরের ঘটনা ঘটে।
কেমন ছিল ২০২১
বিদায়ী বছরটিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন ছিল? আগের বছরগুলোর তুলনায় পরিস্থিতির কী কোন উন্নতি হয়েছে? মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পরিস্থিতির তো কোন উন্নতি হয়নি, বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে সহ্যসীমা সেটা অতিক্রম করার পর্যায়ে রয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন, গুম, ক্রসফায়ারে এখন ভয়ের চাদরে আবৃত হয়ে গেছে মানবাধিকার।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র রিপোর্ট
২০২১ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তাদের পর্যবেক্ষন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাদের পর্যবেক্ষণ হলো, “বিচারহীনতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, ধর্ষণসহ সমাজে এমন একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে, যা ভীতিকর। সারাদেশ আজ ভয়ের চাদরে আবৃত। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানা কারণে বছরজুড়ে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, নারী-অধিকারকর্মী, বিরোধী দল, সমালোচক ও আইনজীবীদের জন্য পরিস্থিতি প্রতিকূলে ছিল।” বিশেষ করে গুমের সংখ্যা কিছুটা কমলেও ক্রসফায়ার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ অনেক বেড়েছে। ক্রসফায়ারের সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় কমেনি।
সুলতানা কামাল
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মানবাধিকারের যে সূচকগুলো আছে সেগুলো যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখবেন বাংলাদেশের কতজন মানুষ মনে করছেন তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন? বা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন বা স্বাধীনভাবে প্রতিদিনকার জীবন নির্বাহ করতে পারেন? এটা একটা সূচক। আরেকটা সূচক হল, মানুষের যদি কোন অধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে তারা কী ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন? কেউ কী মনে করেন, আমি এই সমাজের একজন নাগরিক আমার অধিকার লঙ্ঘিত হলে আমি ন্যায়বিচার পাব? এই প্রত্যাশা কতখানি বিরাজমান সমাজে?
তৃতীয় সূচকটা হল, তারা কতখানি নির্ভয়ে বসবাস করতে পারছে? আমি যে ধর্মের হই না কেন, পরিচয় যাই হোক না কেন এই দেশটা এমন একটা দেশ যেখানে আমি নির্ভয়ে বাস করতে পারি? সবকিছু বাদ দিয়ে যদি এই তিনটা সূচক নিয়েই যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রশাসন বা সরকারের জবাবদিহির অভাব রয়েছে। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা, লঞ্চডুবি বা নারী নির্যাতন হোক আর সংখ্যালঘু নির্যাতন হোক কোথাও কোন বিচার হচ্ছে না। পূজার সময় হিন্দুদের উপর যে নির্যাতনটা হয়ে গেল সেটার কোন বিচার হয় না। রাষ্ট্রের মানবাধিকার রক্ষা করার যে দায়িত্ব সেটা সুচারুভাবে পালিত হচ্ছে না। এটা প্রতিনিয়ত নিম্নমুখী। কোথাও এটার উন্নতির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।”
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৮০ জন। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ বা গুলিবিনিময়ে নিহত হয়েছেন ৫১ জন। বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন ৮ জন। এর মধ্যে গ্রেফতারের পর শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন, গ্রেফতারের আগে ১ জন ও হার্ট অ্যাটাকে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের কারাগারগুলোতে এ বছর অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে কয়েদী ২৯ জন এবং হাজতি ছিলেন ৫২ জন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এটা বলার সুযোগ নেই। বরং মানুষের যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সহ্যক্ষমতা আছে, যে পর্যন্ত হয়ত মানুষ সহ্য করতে পারে সেই পর্যায় অতিক্রম করতে যাচ্ছে। শুধু সংখ্যা দেখে তো লাভ নেই। কিছু কিছু ঘটনা নীতি-নির্ধারকেরা এমনভাবে উপস্থাপন করতে চান যে, এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। বরং ঘটনার কথা যারা বলছে, তারা প্রকারন্তরে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। এমন ধারণা যখন নীতি-নির্ধারকেরা সমাজে দিতে থাকেন তখন স্বাভাবিক কারণেই মানবাধিকার পরিস্থিতির শুভ কোন বার্তা আমরা দেখি না। পরিস্থিতির আরও অবনতি ও চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে বলে আমরা মনে করি।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট
বিদায়ী বছরে মানবাধিকার নিয়ে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়তে হয়েছে সরকারকে। বছরের শেষে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র্যাবের বর্তমান ও সাবেক প্রধানসহ সাত জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাবকে। যদিও সরকারের একাধিক মন্ত্রী এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোনা করেছেন। কিন্তু বছর শেষ হলেও সেই নিষেধাজ্ঞা এখনও প্রত্যাহার হয়নি।
অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও নিখোঁজের শিকার হন সাত জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ছয় জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন একজন। নিখোঁজ ইমাম মাহাদী হাসান ডলারের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়। তার স্ত্রী গণমাধ্যম ও আসককে জানিয়েছেন, গত ৬ নভেম্বর বিকেলে বাড়ি ফেরার সময় দুইটি মোটরসাইকেল ও সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে একদল লোক তাকে জোরপূর্বক তুলে নেয়।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়
সংগঠনটি বলছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল ২০২১ সাল। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন (১৩ অক্টোবর) কুমিল্লার নানুয়ার দীঘি পূজামন্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ও তার পরপর চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারধরের ঘটনা ঘটে। বিদায়ী বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০৪টি প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দির ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৮৪টি বাড়িঘর ও ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৩০০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
ভিন্নমত দমন করার লক্ষ্যে হয়রানিমূলক মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনাও থেমে ছিল না বছরজুড়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ছিল কমপক্ষে এক হাজার ১৩৪টি। এর মধ্যে বিভিন্ন থানায় ৮৮৩টি এবং সরাসরি আদালতে ২৫১টি মামলা হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে থেমে ছিল না ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, পারিবারিক নির্যাতন, সালিশ ও ফতোয়াসহ নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনা। ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট এক হাজার ৩২১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন নয় জন। ২০২১ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
উপসংহার
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, “বিদায়ী বছরটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো ছিল এটা বলা যাবে না। এটা শুধু বাংলাদেশে না, সারা বিশ্বেই পরিস্থিতির খারাপ ছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও। আমাদের সরকার যে চেষ্টা করছে না তা নয়। আসলে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কোন একটা সংস্থা নয়, সবগুলো সংস্থাকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সরকার নিশ্চয় সে চেষ্টা করবে।”
সংবাদ সূত্র: ডয়চে ভেলে
তারিখ 31.12.2021
১৮ বছরেও পরিবারের ১১ জনের হত্যার বিচার পাননি বিমল

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল বাবা-মাসহ পরিবারের ১১ জনকে৷ ১৮ বছরেও বিচার পাননি বিমল শীল৷ ২০০৩ সালে বাড়িতে আগুন দিয়ে ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলাটির এখনও নিষ্পত্তি হয়নি৷ সেই পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য বিমল শীল আদালত, আইনজীবীসহ প্রশাসনের কর্তব্যক্তিদের কাছে বিচারের আশায় ছুটছেন ১৮ বছর ধরে।
২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর
২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় বাইরে থেকে ঘরে তালা লাগিয়ে গানপাউডার ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে পুড়ে মারা যান তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল শীল (৬০), ছেলে অনিল শীল (৪০), অনিলের স্ত্রী স্মৃতি শীল (৩২), অনিলের তিন সন্তান রুমি শীল (১২), সোনিয়া শীল (৭) ও চার দিন বয়সী কার্তিক শীল, তেজেন্দ্র শীলের ভাইয়ের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্রসাদি শীল (১৭), অ্যানি শীল (৭) এবং কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয় দেবেন্দ্র শীল (৭২)। অল্পের জন্য বেঁচে যান তেজেন্দ্র শীলের ছেলে বিমল শীল৷ পরে তিনিই বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ
২০১৯ সালের ২৩ জুন এই মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত। তারপরও পেরিয়েছে ২৮ মাস। কিন্তু বিচার শেষ হওয়া তো দূরের কথা, অর্ধশতের বেশি সাক্ষীর অর্ধেকের সাক্ষ্যও এখনও নেওয়া হয়নি।
বিমল জানান, ‘‘মামলা ঝিমিয়ে আছে। সাক্ষ্য গ্রহণ ঢিলেঢালা। চলতি বছর কোনো সাক্ষী (সাক্ষ্যগ্রহণ) হয়নি। ২২ জন সাক্ষী দিয়েছেন মোট। আশা করেছিলাম, আর কয়েকজন সাক্ষ্য দিলেই শেষ হবে।”
‘‘এখন যে অবস্থা এমনিতে সাক্ষী আসবে না। ওয়ারেন্ট করাতে হবে। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সাক্ষী যেমন- সে সময়ের বাঁশখালী থানার ওসি, তদন্তকারী পুলিশের এএসপি তাদের সাক্ষ্যই হয়নি। সরকারি আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে এদের সাক্ষী করালেই বিচার এগিয়ে যায়।” এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত বিমল, ‘‘আওয়ামী লীগ নেতারা ওয়াদা করেছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে বিচার হবে। গত এক যুগ ধরে আশায় বুক বেঁধে আছি। আশ্বাস দিয়েছিল- নিরাপত্তা দেবে, ঘর দেবে। হয়নি। বাড়িতে একটা পুলিশ ক্যাম্প ছিল, সেটাও তুলে নিয়ে গেছে কয়েক বছর আগে।”
মামলাটি ১৮ বছর ধরে যেভাবে চলছে
আলোচিত এই মামলা বর্তমানে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস ওয়াহিদের আদালতে বিচারাধীন৷ সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ডাকাতির উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, খুন ও লুটতরাজের অভিযোগে ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নতুন অভিযোগ আনে। এরপর ওই বছরের ১৯ এপ্রিল নতুন করে ওই ধারায় ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়।
২০১২ সালের ১২ মে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওই বছরের ২ অক্টোবর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০১৩ সালের নভেম্বর আবার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি ফেরত আসে।
রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পিপি লোকমান হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রয়েছে।
দেরির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত বছর বেশ কয়েক মাস বিচারক শূন্য ছিল। পরে করোনার কারণে লকডাউন ও আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।”
সাক্ষীদের পাওয়া নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘ইতিপূর্বে কয়েকজন সাক্ষীকে হাজির করতে ওয়ারেন্ট পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর হয়ত লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আবার নতুন করে সমন করাতে হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, মামলার ৩৮ জন আসামির মধ্যে দুজন মাত্র কারাগারে আছেন; জামিনে আছেন ১৭ জন। বাকি ১৯ আসামি পলাতক।
সংবাদ সূত্র: ডয়চে ভেলে
তারিখ 19.11.2021
সর্বোচ্চ আদালতে তৃতীয় নারী বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ

চার দশকের বিচারিক কর্মজীবন পার করে তিনি এখন আপিল বিভাগের বিচারপতি। স্বপ্নজয়ী এই ব্যক্তি হলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। বছরখানেক আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার পর ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুনসেফ (বর্তমান সহকারী জজ) হিসেবে নিয়োগ পান কৃষ্ণা দেবনাথ।
ছোটবেলা
১৯৬৪ সাল। ঢাকার সদরঘাটের ইস্টবেঙ্গল স্কুলে চর্তুথ শ্রেণিতে পড়ে একটি শিশু। তার বাবা দীনেশ চন্দ্র দেবনাথ তখন ঢাকার আদালতের পঞ্চম সাবজজ। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে মেয়েটি বাবার কাছে যেত। এজলাসের পাশে বসে দেখত বাবার বিচার কার্যক্রম। তখন থেকেই তার স্বপ্ন, বড় হয়ে বিচারক হবে। মাত্র ২৬ বছর বয়সে মুনসেফ (সহকারী জজ) হয়ে স্বপ্নের প্রথম ধাপটিতে পা রাখেন তিনি। চার দশকের বিচারিক কর্মজীবন পার করে তিনি এখন আপিল বিভাগের বিচারপতি। স্বপ্নজয়ী এই ব্যক্তি হলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। এই অবস্থানে আসতে তাঁকে পার হতে হয়েছে নানান প্রতিকূলতা ও বাধাবিপত্তি।
স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাবা
পাকিস্তান আমলে ১৯৪৮ সালে সাব–অর্ডিনেট জুডিশিয়ারিতে (অধস্তন আদালত) যোগদান করেন দীনেশ চন্দ্র দেবনাথ। বিচার বিভাগে কর্মরত অবস্থায় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিগ্রহের শিকার হন তিনি। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি। বাবাকে দেখেই বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কৃষ্ণা দেবনাথ। আর এই স্বপ্ন পূরণে সব সময় তাঁর পাশে ছিলেন মা বেনু দেবনাথ।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পুড্ডায় দীনেশ চন্দ্র দেবনাথের গ্রামের বাড়ি। তবে বাবার কর্মস্থল রাজবাড়ী মুনসেফ কোয়ার্টারে ১৯৫৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্ম নেন কৃষ্ণা দেবনাথ। তাঁরা দুই ভাই ও তিন বোন। রাজবাড়ীতে ভাইবোনের সঙ্গে কাটে শৈশব। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় যেতে হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। ১৯৭০ সালে সিলেট গার্লস স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পাস করেন তিনি। লক্ষ্য যেহেতু বিচারক হওয়া, তাই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি জুর (আইনে স্নাতক) ও এম জুর (আইনে স্নাতকোত্তর) পাস করেন। পরে রাজশাহী জেলা আইন সমিতিতে আইন পেশা শুরু করেন।
২৬ বছর বয়সেই বিচারক
বছরখানেক আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার পর ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুনসেফ (বর্তমান সহকারী জজ) হিসেবে নিয়োগ পান কৃষ্ণা দেবনাথ। ১৯৯২ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে সাবজজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে তাঁর পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় পরপর তিনবার তাঁকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পদোন্নতির তালিকার শীর্ষে ছিল তাঁর নাম। তারপরও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এ সময় এগিয়ে আসেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ড. কামাল হোসেন ও আইনজীবী এম আমীর–উল ইসলাম। আর পাশে থেকে সাহস জোগান তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল হক। তাঁদের পরামর্শে প্রায় প্রতিটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা রিট করেন। এতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ‘পরামর্শ’ শব্দটি সরকারের জন্য মানা বাধ্যতামূলক—মর্মে নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ১৯৯৪ সালে রুল দেন। রুল নিষ্পত্তির আগেই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের হস্তক্ষেপে ওই বছরই কৃষ্ণা দেবনাথকে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
ভবিষ্যৎ দেখতে পান মুনসেফ বাবা
১৯৯২ সালের দুর্বিষহ ওই ঘটনার সময় চাকরিই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বিচারক কৃষ্ণা দেবনাথ, সত্যি বলতে, সঙ্গে পদত্যাগপত্র রাখতেন। এতে আপত্তি জানিয়ে বরাবরই সাহস জুগিয়ে আসছিলেন তাঁর বাবা, এমনটিই বললেন এই বিচারপতির এক স্বজন। তিনি জানান, তাঁর বাবা বলতেন, তিনি মেয়ের ভবিষ্যৎ দেখতে পান। তবে এই ভবিষ্যৎ যে এত দূর পর্যন্ত (আপিল বিভাগের বিচারপতি হওয়া) বিস্তৃত ছিল, তা কেউ কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। দীনেশ চন্দ্র দেবনাথ (মৃত্যু ২০০০) মেয়ে কৃষ্ণা দেবনাথকে জেলা জজ হিসেবে এবং বেনু দেবনাথ (মৃত্যু ২০১৭) হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দেখে গেছেন। বেঁচে থাকলে আজ সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন তাঁরা, জানান ওই স্বজন।
পাশে ছিল পরিবার
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী স্বপন দত্তের সঙ্গে ১৯৮১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কৃষ্ণা দেবনাথ। বিয়ের আগে মায়ের উৎসাহ ও প্রেরণা পেয়েছেন, বিয়ের পর সেই দলে যুক্ত হলেন স্বামী। স্ত্রীর বদলির চাকরি। এক বছর এই জেলায়, তো পরের বছর অন্য জেলায়। কিন্তু এতে বিরক্ত হননি, বরং স্ত্রীকে দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন তিনি। একসময় এই দম্পতির ঘর আলো করে আসে দুই কন্যাসন্তান—আনন্দী কল্যাণ ও ইন্দিরা কল্যাণ। তাদের পড়াশোনা, দেখভাল—বেশির ভাগটাই সামাল দিয়েছেন কৃষ্ণা দেবনাথের স্বামী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা। মেয়েরাও একপর্যায়ে বুঝে গেছেন তাঁদের মায়ের কাজের ধরন। স্ত্রীর এই অর্জনে স্বভাবতই অনেক খুশি ও গর্বিত স্বপন দত্ত। দুই মেয়েই শিক্ষকতা করছেন। বড় মেয়ে ড. আনন্দী কল্যাণ ও ছোট মেয়ে ড. ইন্দিরা কল্যাণ এবং তাঁদের স্বামীরা আমেরিকার পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
অধস্তন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালতে
বিভিন্ন জেলায় জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকার জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পান কৃষ্ণা দেবনাথ। তিনিই ঢাকা জেলার প্রথম নারী জেলা জজ। এই দায়িত্ব পালনকালে ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল তাঁর নিয়োগ স্থায়ী হয়। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন কৃষ্ণা দেবনাথ। আপিল বিভাগের তিনি তৃতীয় নারী বিচারপতি। তাঁর অবসরের বয়স চলতি বছরের ৯ অক্টোবর।
প্রথা অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়ে থাকে। ৯ জানুয়ারি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম বলেই আজ এই আসনে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছি।’ শপথের পর বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি। এই নিয়োগ দেশে নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখবে।’
অবসরে লিখবেন বই
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ মানুষকে আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন এবং অবসরে গান শুনতে পছন্দ করেন, জানালেন তাঁর আরেক ঘনিষ্ঠজন। ২০০০ সালে তিনি কন্যা তোমার ঠিকানা কী? নামে প্রচারিত একটি নাটকের কাহিনি লেখেন। ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি আরও জানান বিচারপতির অবসরকালীন পরিকল্পনা। দীনেশ চন্দ্র দেবনাথ নিজের জীবন নিয়ে কত কথা কত স্মৃতি নামে বই লিখেছেন। অবসরে গিয়ে কত কথার পরের কথা নামে বই লিখবেন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় আইন নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ ভাষায় ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে তথ্যচিত্র দিয়ে গল্প বলবেন—এমন ইচ্ছাও আছে তাঁর।
ধৈর্য, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ
বদলির চাকরি নারীদের জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের ক্ষেত্রে পরিবার ও কর্মক্ষেত্র সমান গুরুত্ব পেয়েছে। যখন তিনি মেহেরপুরের জেলা জজ, তখন তাঁর ছোট মেয়েটি অনেক ছোট। ধৈর্য, সততা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা তাঁকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে—বলছিলেন বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম (সিনিয়র জেলা জজ)। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উম্মে কুলসুম বলেন, জুনিয়র বিচারকদের জন্য তিনি সব সময় প্রেরণার উৎস। তিনি সব সময় বলতেন, ধৈর্য, সততা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
সংবাদ সূত্র: প্রথম আলো
বাংলাদেশে কেউ ‘সংখ্যালঘু নয়’, কোবিন্দকে জানালেন হাসিনা

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা সফররত কোবিন্দের সঙ্গে বুধবার বিকালে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাদের আলোচনায় ওই প্রসঙ্গ আসে। পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্গাপুজার পর যে সমস্যা হয়ে ছিল, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, আমাদের দেশে সংখ্যালঘু হিসাবে কাউকে ট্রিট করা হয় না। সকলের সমান অধিকার দেওয়া হয়।”
কুমিল্লা শহরের মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর প্রসঙ্গ
দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে একটি পূজা মণ্ডপে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
এর জের ধরে চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে।
অন্যান্য প্রসঙ্গ
বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এমন স্লোগানের প্রশংসা করেছেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী আসামের দুই সংসদ সদস্য।
“তারা বলেছেন, ভারতবর্ষের সবাই এক বাক্যে এটা বলে, সব লোক এটা পছন্দ করেছে।” কানেকটিভিটি ও রোহিঙ্গা সঙ্কটের মত বিষয়গুলোও আলোচনায় এসেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যার মত অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তার বৈঠকে বলেছেন যে, আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করেছি।
“বাকি যেগুলি আছে, মোটা দাগে সবগুলিকে এক জায়গায় নিয়ে এসে উনি বলেছেন, আমরা আলোচনার মধ্য দিয়ে এগুলি সমাধান করতে পারব।”
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের আয়োজনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের রাষ্ট্রপতি।
বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে গালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসে বাংলাদেশের উদযাপনে সঙ্গী হবেন রাম নাথ কোবিন্দ। সফর শেষে শুক্রবার তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
সংবাদ সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
তারিখ 15.12.2021
৩৩ থেকে ৮ শতাংশ, বাংলাদেশে ক্রমশ কমছে হিন্দুদের সংখ্যা

ব্রিটিশ আমলের পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তান আমলের পূর্ব পাকিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যার হিসাব পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে হওয়া আদমশুমারিতে। এসব তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোতে রক্ষিত আছে। ১৯০১ সালে যা ছিল ৩৩ শতাংশ, বর্তমানে সেটা নেমে এসেছে ৮ শতাংশে!
বাংলাদেশের সংবিধান ও হিন্দু
সেই তথ্য থেকে কী জানা যায়, তার আগে দেখে নেব বাংলাদেশে হিন্দুদের ইতিহাস ও সেই দেশের সরকার বা সংবিধান হিন্দুদের কীভাবে দেখে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে পৃথক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধানে বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ নিজেকে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে হিন্দুদের পরিসংখ্যান
২০১১ সালে বাংলাদেশে সর্বশেষ আদমশুমারি হয়। সেই পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
| সাল | মুসলিম জনসংখ্যা (%) | হিন্দু জনসংখ্যা (%) |
|---|---|---|
| ১৯০১ | ৬৬.১ | ৩৩ |
| ১৯১১ | ৬৭.২ | ৩১.৫ |
| ১৯২১ | ৬৮.১ | ৩০.৬ |
| ১৯৩১ | ৬৯.৫ | ২৯.৪ |
| ১৯৪১ | ৭০.৩ | ২৮ |
| ১৯৫১ | ৭৬.৯ | ২২ |
| ১৯৬১ | ৮০.৪ | ১৮.৫ |
| ১৯৭৪ | ৮৫.৪ | ১৩.৫ |
| ১৯৮১ | ৮৬.৭ | ১২.১ |
| ১৯৯১ | ৮৮.৩ | ১০.৫ |
| ২০০১ | ৮৯.৬ | ৯.৩ |
| ২০০১ | ৮৯.৬ | ০৯.৩ |
| ২০১১ | ৯০.০ | ৮.৫ |
উপরের পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কার, সংযুক্ত ভারতের একটা অংশ অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর সেই দেশে হিন্দুদের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে। তার কারণ দেশভাগের সময় তৎকালীন পাকিস্তান ছেড়ে বিপুল সংখ্যক হিন্দু চলে এসেছিলেন ভারতে। আবার বাংলাদেশ ভাগ হওয়ার সময় ও সেদেশ ছেড়ে বাধ্য হয়েছিলেন অনেক হিন্দু।
সংবাদ সূত্র: আজতক বাংলা
তারিখ ২০-১০-২০২১
কুমিল্লার দুর্গাপূজা এবং হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা পরিক্রমা

কুমিল্লায় শুরু - ১৩ অক্টোবর বুধবার দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন কুমিল্লার নানুয়া দীঘি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে চকবাজার এলাকায় (কাপুড়িয়াপট্টি) শত বছরের পুরনো চাঁন্দমনি রক্ষাকালী মন্দিরে সকাল ১১টায় প্রথম হামলা হয়৷ এর আগে সকালে পূজা মণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন উদ্ধার করেন কোতোয়ালী থানার ওসি আনোয়ারুল আজিম৷ এরপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা।
অন্যান্য জেলায় হামলা
কুমিল্লা ছাড়াও একইদিন চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, গাজীপুর, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ভোলা, চট্টগ্রাম, ও কক্সবাজারে হামলা হয়েছে বলে ১৬ অক্টোবর জানায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ৷ এছাড়া ১৪ অক্টোবর বান্দরবান ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হামলার ঘটনা ঘটে৷ আর ১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর চৌমুহনী ও চট্টগ্রামে হামলা হয়েছে৷
তিন দিনে ৭০ মণ্ডপে হামলা
১৬ অক্টোবর শনিবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তিন দিনে ৭০টি পূজা মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে৷ এসবের বাইরে ৩০টি বাড়ি এবং ৫০টি দোকানেও ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে৷
ফেনীতে হামলা
মন্দিরে মণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বানে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিল৷ ফেনীতে সেই কর্মসূচির প্রস্তুতি চলার সময় হামলা হয়৷ এরপর শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়৷ কয়েকটি মন্দির ও হিন্দুদের মালিকানাধীন বেশ কিছু দোকানপাটে ভাঙচুর, যানবাহনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া যায়৷ বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ফেনীতে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে৷
রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা
১৭ অক্টোবর রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জের এক হিন্দু তরুণের ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে রামনাথপুর ইউনিয়নে জেলেপল্লির হিন্দু পরিবারের উপর হামলা হয়৷ হামলাকারীরা ঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুটপাটও করে৷
জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ
কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে ১৫ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘মালিবাগ মুসলিম সমাজ’ এর ব্যানারে ঢাকার বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের করেন কয়েকশ মানুষ৷ কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছে পুলিশ বাধা দিলে মিছিলকারীরা দুই ভাগ হয়ে যান৷ তাদের একটি অংশ বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে শুরু করে৷ পুলিশ তখন বিভিন্ন গলির মুখে অবস্থান নেয় এবং টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোঁড়ে৷
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিক্ষোভ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে প্রায় দশ হাজার মুসলিম ১৬ অক্টোবর শনিবার বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ করেন৷ ইসলাম অবমাননার অভিযোগে তারা এই বিক্ষোভ করেন৷
মাশরাফির প্রতিক্রিয়া
সোমবার ফেসবুকে পীরগঞ্জে হামলার ছবি শেয়ার করে মাশরাফি লেখেন, এই ঘটনা তার হৃদয় ভেঙে চুরমার করেছে৷ ‘‘এ লাল সবুজতো আমরা চাইনি৷ কতো কতো স্বপ্ন, কতো কষ্টার্জিত জীবন যুদ্ধ এক নিমিষেই শেষ৷ আল্লাহ আপনি আমাদের হেদায়েত দিন৷’’
১০২ মামলা, গ্রেপ্তার ৫৮৩
হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ, প্রতিমা ও বাড়িঘরে সাম্প্রদায়িক হামলায় শুক্রবার পর্যন্ত ১০২টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস৷ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৮৩ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্যও দিয়েছে তারা৷
নয় বছরে ৩,৬৭৯ হামলা
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব বলছে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর তিন হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে এক হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা৷ ৪৪২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা৷ আর প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৬৭৮টি৷ এসব হামলায় আহত হয়েছেন ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ নিহত হয়েছেন ১১ জন৷
প্রতিবাদ
সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ১৮ অক্টোবর সোমবার হিন্দুদের প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷
সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে৷ শাহবাগের আন্দোলনকারীরা তিন দফা দাবি পূরণ করতে সরকারকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন৷ দাবিগুলো হলো, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে দোষীদের বিচার; ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংস্কারে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহত ও নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন৷
সংবাদ সূত্র: ডয়চে ভেলে
তারিখ ২২.১০.২০২১
বাংলাদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম মতাদর্শিকভাবে সাম্প্রদায়িক?

১৩ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ৬দিনে মন্দির ও পূজামণ্ডপসহ ১০১টি ধর্মীয় স্থাপনা, এবং ১৮১টি বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা হয়েছে৷ কিন্তু এবারই প্রথম একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে, সেটি হলো- কুমিল্লার ঘটনার পর আমাদের টিভি চ্যানেলসহ বেশিরভাগ গণমাধ্যম পুরোপুরি নিশ্চুপ ছিল৷ যেখানে তেলাপিয়া মাছের প্রজনন ক্ষমতার গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো একটি ফিতা কাটার খবর সরাসরি সম্প্রচার করতে পিছপা হয় না সেখানে তারা এত বড় একটি ঘটনাকে ব্ল্যাক আউট করেছিল৷ এ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যেও প্রশ্ন দেখা দেয়৷
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বাংলাদেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে, ২০১৩ সালে পাবনার সাঁথিয়ায়, ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ায়, ২০১৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে, ২০১৯ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনে, চলতি বছর সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুপল্লিতে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ বাংলাদেশে গত দুই দশকে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতে যে দলই জিতুক না কেন প্রতিটি নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুরা ব্যাপক হামলার শিকার হয়েছে৷
গণমাধ্যমগুলোতে উপস্থাপনা
প্রতিবারই আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে দু ধরনের উপস্থাপনা দেখা গেছে, এক. লিবারেল মতাদর্শে বিশ্বাসী গণমাধ্যমগুলোতে ঘটনার সাদামাটা প্রকাশ; দুই. ইসলামী মতাদর্শে বিশ্বাসী গণমাধ্যমগুলোতে ঘটনাগুলোর একপেশে ও খণ্ডিত উপস্থাপনা ছিল৷ এবারই প্রথম দেখা গেলো, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় নীরব থাকার উদাহরণ৷
২০০২ সালে গুজরাট (গোধরা) দাঙ্গার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা দাঙ্গার ঘটনা অনেকদিন ধরেই গণমাধ্যমে খবর হতো না৷ ব্যাপক সমালোচনার পর ২০১৭ সাল থেকে আবার তারা দাঙ্গার খবর পুরোদস্তুর প্রচার করতে শুরু করে৷ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা সহিংসতার খবর প্রচার না করার পেছনে পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকদের যুক্তিটি ছিল, এ ধরনের খবর প্রকাশ হলে সেগুলো অন্যান্য জায়গায় সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে উস্কানি দেবে৷
বাংলাদেশেও কুমিল্লার পূজামণ্ডপে হামলার খবর ব্ল্যাকআউট করার পেছনে টকশোতে একটি টিভির কর্তাব্যক্তিকে একই যুক্তি দিতে শুনেছি৷ পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষের সাংবাদিকরা তাদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন দুটি কারণে৷ প্রথমত: গণমাধ্যমের চিরায়ত যে দায়িত্ব সঠিক ও নির্ভুল তথ্য তুলে না ধরলে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়৷ নির্যাতিতরা এমনিতেই প্রান্তিক অবস্থানে থাকেন৷ ফলে গণমাধ্যম যদি তার প্রহরীর ভূমিকা থেকে সরে যায় তাহলে তারা আরও প্রান্তিক অবস্থানে চলে যান৷ শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রত্যেকটি দেশে চিরায়তরূপে সাম্প্রদায়িকতা জনজীবনের একটি নিয়মিত অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত হলো এর কুৎসিত অভিব্যক্তি৷ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা হামলায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কোন গবেষণা না হলেও ভারতে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে৷
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর ব্ল্যাক আউট
২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও দাঙ্গায় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রগুলো যখন সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক খবর এবং মতামত প্রকাশ করেছিল তখন জাতীয় ইংরেজি দৈনিকগুলো প্রকৃত খবর প্রকাশ করেছিল, যার কারণে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নির্যাতন বন্ধে তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া হয়৷
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর ব্ল্যাক আউটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দ্বিতীয় কারণটি হলো সামাজিক গণমাধ্যমের প্রভাব ও ভুয়া খবরের আধিক্য৷ এখন সামাজিক মাধ্যম এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, অনেক সময়ে বিকৃত করে এমন কিছু তথ্য ছড়ানো হয় যাতে দাঙ্গা, সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে৷ সামাজিক মাধ্যমের এই চাপ আটকাতে গেলে সত্যিটা জানাতে হবে, বাস্তবে কী হচ্ছে, সেটা দেখাতে হবে৷
সামাজিক মাধ্যমের গুজবের সমান্তরালে বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমগুলোর দায়িত্বশীলভাবে সংবাদ পরিবেশন এখন সময়ের দাবি৷ ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গায় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে লজ্জাজনক৷ সরকারি চাপে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো প্রথমে কিছুই ঘটেনি এমন ভাব নিয়েছিল৷ পরে নির্যাতিত শিখদের বিরুদ্ধে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করেছিল৷ ফলশ্রুতিতে শিখরা একেধারে স্থানীয় ও জাতীয় উভয় পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল৷ ভারতীয় গণমাধ্যম গবেষকরা মনে করেন, ১৯৮৪ ও ২০০২ সালের দুটো ঘটনায় গণমাধ্যম তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারলে অর্থাৎ যা ঘটেছে তা ঠিক এবং যথাযথভাবে তুলে ধরলে হতাহতের ঘটনা অনেক কম হত৷
গণমাধ্যমের দায়িত্ব
প্রতিবারই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার পর এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা গণমাধ্যমে দেখি৷ দেখি কিছু সাদামাটা রিপোর্ট৷ কিন্তু সব সরকারের আমলেই সংখ্যালঘু নির্যাতন ও তাদের সম্পত্তি দখলের পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোর যে প্রভাব তা নিয়ে গণমাধ্যমে কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখা যায় না৷ প্রতিবার নির্বাচনের পর ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনাগুলো নিয়ে কি আমাদের কোন গণমাধ্যম আজ পর্যন্ত কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছে? ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশব্যাপী হামলার পর তদন্ত কমিটির যে সুপারিশ করেছিল সেগুলো কেন বাস্তবায়িত হয়নি সে প্রশ্ন কি কখনও বাংলাদেশের গণমাধ্যম করেছে? কেন একটি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার আজও হয়নি সে কারণ অনুসন্ধান করেছে? সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করা, অপরাধীদের শাস্তির বিধান করা, নির্যাতনের কারণগুলো চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকারের ব্যবস্থা করা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—এসব কিছুই বাংলাদেশে হয়নি৷ এতগুলো অনিবার্য প্রয়োজন কেন সম্পাদন হলো না সে প্রশ্ন রাখার কথা ছিল বাংলাদেশের মূলধারা গণমাধ্যমগুলোর, কিন্তু তারা রাষ্ট্রের মতই তারা জনগণের একটি অংশকে কার্যত অবহেলা করে গেছে৷ বাংলাদেশে যে ধরনের হাইব্রিড শাসন ব্যবস্থা (গণতন্ত্রও নয়, একনায়কতন্ত্র নয়) তাতে গণমাধ্যমের এ দায়িত্ব পালন করা সবচেয়ে জরুরি।
রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের প্রভাব বলয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া
বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের তিনটি সংবাদপত্র কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং ডেইলি সান৷ আছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম এবং টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪৷ এছাড়া এফএম রেডিও স্টেশন রেডিও ক্যাপিটালও তাদের৷ এই মিডিয়া কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর৷
বেক্সিমকো গ্রুপ
এই গ্রুপের টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি৷ মালিক বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান৷
স্কয়ার গ্রুপ
এই গ্রুপের টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টেলিভিশন৷ এর কর্ণধার স্কয়ার গ্রুপের অধীনে থাকা স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী৷
ইমপ্রেস গ্রুপ
টেলিভিশন চ্যানেল, চ্যানেল-আই এর মালিকানা ইমপ্রেস গ্রুপের৷ এর কর্ণধার ফরিদুর রেজা সাগর৷
মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশান কোম্পানি
টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা এবং এটিএন নিউজ এই কোম্পানির৷ এর কর্ণধার মাহফুজুর রহমান৷
ইত্তেফাক গ্রুপ অফ পাবলিকেশনস লিমিটেড
সুপরিচিত পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক এই কোম্পানির৷ এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী৷ বর্তমানে ইত্তেফাকের সম্পাদক জাতীয় পার্টি নেতা, সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী তাসমিমা হোসেন এবং প্রকাশক মঞ্জু-তাসমিমা দম্পতির কন্যা তারিন হোসেন৷
এইচআরসি গ্রুপ
বাংলা পত্রিকা যায় যায় দিন এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউএজ এই গ্রুপের৷ এর মালিক আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর ভাই সাঈদ হোসেন চৌধুরী৷ সাবের হোসেন চৌধুরী কর্ণফুলি গ্রুপের মালিক৷ সেই সুবাদে দেশ টিভির কর্ণধার তিনি৷
সিটি পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড
এই কোম্পানির পত্রিকা দৈনিক দিনকাল৷ এর মালিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷
হামিম গ্রুপ
চ্যানেল-২৪ টেলিভিশন এবং সমকাল পত্রিকার মালিক৷ এর কর্ণধার আওয়ামী লীগ নেতা একে আজাদ৷
ট্রান্সকম গ্রুপ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলো এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের মালিক এই গ্রুপ৷ প্রয়াত শিল্পপতি লতিফুর রহমান এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা৷ প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণও রয়েছে৷
বেঙ্গল গ্রুপ
টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির মালিক বেঙ্গল গ্রুপ৷ এর কর্ণধার মোর্শেদ আলম এমপি৷
এনটিভি
বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মোসাদ্দেক আলী ফালু এর মালিক৷ তিনি একজন ব্যবসায়ী৷
গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার
জনকণ্ঠ পত্রিকার মালিক এই শিল্প পরিবার৷
রূপায়ন গ্রুপ
দৈনিক পত্রিকা দেশ রূপান্তর এই গ্রুপের৷ রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল৷
সিটি গ্রুপ
সময় টেলিভিশনের মালিক এই গ্রুপ৷ সবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ভাই এর কর্ণধার৷
মেঘনা গ্রুপ
একাত্তর টেলিভিশন এই গ্রুপের৷ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মোস্তাফা কামাল এই গ্রুপের কর্ণধার৷ তবে সাংবাদিক মোজাম্মেল হক বাবু’র শেয়ার রয়েছে এতে৷
শ্যামল বাংলা মিডিয়া
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশন এই মিডিয়া কোম্পানির৷ এর কর্ণধার আবদুল হক৷ তবে নেপথ্যে মালিকানায় বিএনপির প্রয়াত সাংসদ সাদেক হোসেন খোকার নাম শোনা গেলেও নথিপত্রে তার নাম নেই বলে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে৷
যমুনা গ্রুপ
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা এবং যমুনা টেলিভিশন এই গ্রুপের৷ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী সালমা ইসলাম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান৷ সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য তিনি৷
(‘হু ওনস দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’ গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ এবং গবেষক মো. সাজ্জাদুর রহমান৷ প্রকাশক সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ,ঢাকা)
সংবাদ সূত্র: ডয়চে ভেলে
তারিখ ২২.১০.২০২১
৯ বছরে হিন্দুদের উপর ‘৩৬৭৯ হামলা’

কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ভাংচুরের মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, গত নয় বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটি প্রতিবছরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রতিবেদন দেয়। ২০১৩ সাল থেকে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনাগুলোও তারা প্রতিবেদনে আলাদাভাবে দিয়ে আসছে।
আসকের প্রতিবেদন
আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর নয় মাসে হিন্দুদের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে।
এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সময়ে হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি।
এসব হামলায় আহত হয়েছে ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহত হয়েছে ১১ জন।
এর বাইরেও ২০১৪ সালে দুজন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন। শ্লীলতাহানি করা হয় আরও চারজনের।
এছাড়া ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ১০টি হিন্দু পরিবারকে জমি ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখলের অভিযোগ ওঠে।
আসকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত নয় বছরে হিন্দুদের উপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে ২০১৪ সালে।
ওই বছরের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। এর পরবর্তী সহিংসতার শিকার হন হিন্দুরা। ৭৬১টি হিন্দু বাড়ি-ঘর, ১৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ২৪৭টি মন্দির-মণ্ডপে হামলা হয় ওই বছর। তখন নিহত হন একজন।
সবচেয়ে কম হামলা হয়েছে ২০২০ সালে। মহামারীর মধ্যে গত বছর ১১টি বাড়ি ও ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার তথ্য রয়েছে আসকের প্রতিবেদনে। তবে মন্দিরে হামলা হয়েছে ৬৭টি।
তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিন্দু খুন হয়েছে ২০১৬ সালে, মোট সাতজন। এসব হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলো ‘জঙ্গি হামলা’ বলে পরে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজনৈতিক দোষারোপ
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় বরাবরই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলে।
এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি এবং তাদের জোটসঙ্গী দলগুলোকে দায়ী করেছে হিন্দুদের উপর হামলার জন্য। আবার বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, ক্ষমতাসীনরাই এসব ঘটিয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হিন্দুদের উপর বারবার হামলা চলছে। একটা জিনিস স্পষ্ট, এটার নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে।
“যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের কিছু লোকজন এসবে যুক্ত থাকেন। সরকারদলীয় মাঝারি গোছের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রামুতে দেখেছি, লামায় দেখেছি। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা নিজেরা লাভবান হওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।”
পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক দোষারোপ চললেও মূল অপরাধটি আড়াল হয়ে যায় বলে সঙ্কটের সমাধানও আসছে না বলে মনে করেন নূর খান।
“যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তখনই তারা বিরোধী দলের দিকে আঙুল তোলেন। যার ফলাফল এসবের কোনো বিচার হয় না। গত ১০/১৫ বছরের ঘটনা দেখলে দেখা যাবে, কোনোটারই বিচার হয়নি। এমন কোনো দৃষ্টান্ত তৈরি হয়নি, যাতে অপরাধীরা ভাবতে পারে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়া যাবে না। যার ফলে ঘটনা ঘটেই চলেছে, মাত্রাও বাড়ছে।”
সংবাদ সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
তারিখ ১৮-১০-২০২১